satyadharmma book ads

Satya-dharmma (সত্য-ধর্ম্ম)



         
                                   ওঁং    
                            সত্য-ধৰ্ম্ম।

                               মুখবন্ধ।

আহা! জগতের আজ কি শুভদিন! কি আনন্দময় দিন !! কি অমৃতময় দিন !!! কোটি কোটি মানবের উদ্ধারের পথ আজ প্রকাশিত হইল। পাপপূর্ণ জগৎ আজ পরিত্রাণের পথ প্রাপ্ত হইতে চলিল !! ইহা অপেক্ষা সুখের আনন্দের দিন আর কি হইতে পারে ??? হে মানবগণ! তোমরা প্রস্তুত হও; তোমাদিগের পরিত্রাণ করিতে পরমপিতা আজ উদ্যত হইয়াছেন।

সত্যধর্মের যথাযথ বিবরণ এই গ্রন্থের প্রকরণবিশেষে বিবৃত হইবে। মুখবন্ধে এইমাত্র বলা যাইতেছে যে, নিরাকার, (নিরাকার বলিলেও ঐশ্বরিক ভাব কিছুই বুঝা যায় না। একারণ "উপাসনা" নামক গ্রন্থে ঈশ্বরের স্বরুপ পাঠ কর।) অদ্বিতীয়, সর্ব্বব্যাপী, সর্ব্বশক্তিমান, অনাদি-অনন্ত, অসীম, অনন্ত-গুণ-নিধান পরমপিতার উপাসনা করিবে। মনুষ্য স্ব-কৃত কর্মানুসারে আত্মপ্রসাদ বা আত্মগ্লানি ভোগ করে, দেহ-ত্যাগান্তে পরলোকে অবস্থিতি করে, আর পরলোক-গতদিগের মধ্যে কতকগুলি আত্মা পুনরায় জন্মগ্রহণ করিয়া থাকেন, কেহ কেহ আর জন্মগ্রহণ করেন না। এই বিশুদ্ধ ধর্মের মতে সাকার উপাসনা নাই (সাকারের উপাসনা নাই, কিন্তু অর্চনা আছে। ইহার বিস্তৃত বিবরণ "উপাসনা" নামক গ্রন্থে দেখ।)
যোগ-সাধন নাই, জাতিভেদ নাই, এবং নির্ব্বাণ (ঈশ্বরে লীন হওয়া) নাই'। (স্ব-প্রযত্নে যে, কেহ লীন হইতে পারে না, ইহাই ইহার উদ্দেশ্য। ঈশ্বরেচ্ছা হইলে সকলেই তাঁহাতে লীন হইতে পরে।) ইহার মতে গুণসাধন সর্ব্বপ্রধান কার্য্য। সুতরাং ঈশ্বরোপাসনা ও গুণের অভ্যাস একমাত্র কার্য্য। এই ধর্মানুসারে জগতের সমস্ত নরনারীকে সহোদর ও সহোদরার ন্যায় জ্ঞান করিতে হয়, এই অভেদ ভাব অবশেষে সমস্ত চেতন পদার্থে পরিণত হয়। এই ধৰ্ম্ম অবলম্বনার্থে হিন্দুশাস্ত্রোক্ত চতুর্ব্বিধ আশ্রমের বিশেষ কোন আশ্রম প্রয়োজনীয় নহে, সকল আশ্রমীই ইহা অবলম্বন করিতে পারেন। সত্যধর্ম্মের আশ্রম হৃদয়, যাহাতে পরমাত্মা আসীন থাকেন। "আশ্রম গ্রহণ কর" বলিলে বুঝিতে হইবে যে, হৃদয়ে জগদীশ্বরকে স্থান দেও। যে নিরাশ্রমী, তাহার হৃদয় নাই, তাহাতে পরমাত্মা বসিতে পারেন না, কেবল উপরি উপরি রক্ষা করেন, কিন্তু পরিত্যাগ করেন না।

    সম্প্রতি বক্তব্য এই সত্যধৰ্ম্ম যে পৃথিবীর সমস্ত প্রচলিত ধৰ্ম্ম অপেক্ষা সত্য ও উৎকৃষ্টতম, তাহা প্রথম পরিচ্ছেদে বর্ণিত হইবে। এক্ষণে কেবল উহা যে অন্যান্য প্রচলিত ধৰ্ম্ম অপেক্ষা বিভিন্ন, তাহাই প্রদর্শিত হইতেছে

১। সত্যধর্মে সাকার উপাসনা নাই, সুতরাং সমস্ত সাকারবাদপূর্ণ ধৰ্ম্ম হইতে ইহা বিভিন্ন।

২। ইহাতে হঠযোগাদির ন্যায় কোনও প্রকার যোগ-সাধনা নাই এবং পদ্মাসনাদির ন্যায় কোনও প্রকার আসন-সিদ্ধিও নাই, সুতরাং ইহা সমস্ত যোগ-সাধন ধৰ্ম্ম ও আসন-সাধন ধৰ্ম্ম হইতে বিভিন্ন।

৩। নিরাকারবাদী বেদান্তপ্রতিপাদ্য ধৰ্ম্ম ও স্বল্পকাল প্রচলিত ব্রাহ্মধৰ্ম্ম হইতেও ইহা বিভিন্ন। কারণ বেদান্তের অতি ভীষণ অহঙ্কারময় অন্যায্য "সোহহং" প্রভৃতি ভাবেও ইহা দূষিত নহে এবং ব্রাহ্মধর্ম্মের ন্যায় "একবার মাত্র মনুষ্য জন্ম গ্রহণ করে" ইত্যাদি অদূরদর্শিতায়ও ইহা মহত্ত্বশূন্য নহে। 

৪। পরমপিতার সহিত "পুত্র ও পবিত্র আত্মার" অভেদজ্ঞান প্রযুক্ত খ্রীষ্টীয় ধৰ্ম্ম এবং পুনর্জন্ম অস্বীকার প্রভৃতি নিবন্ধন খ্রীষ্টীয় ও মহম্মদীয় ধৰ্ম্ম ইহা হইতে বিভিন্ন। মহম্মদীয় ধর্মে নরহত্যারও বিধি দেয়, সত্যধৰ্ম্ম হত নরকে জীবন দান করেন।

৫। বৌদ্ধেরা যদিও পরম সত্য অহিংসাবিষয়ে সত্যধর্মের কিঞ্চিৎ নিকটস্থিত, কিন্তু ঈশ্বরজ্ঞান, পরলোক ও মুক্তি প্রভৃতির পরিস্ফুট বোধ এবং উপাসনা প্রভৃতি বিষয়ে অত্যন্ত দূরগত ও নিম্নস্থিত। সুতরাং সত্যধৰ্ম্ম উহা অপেক্ষাও বিভিন্ন।

৬। সত্যধৰ্ম্ম আধুনিক "থিয়জফিষ্ট-ধৰ্ম্ম" হইতেও বিভিন্ন। কারণ পরলোক ও পুনর্জন্মাদি বিষয়ে ইহার সহিত ঐক্য নাই। আর থিয়জফিষ্ট-ধর্মে কোন কোন গুণের উন্নতির বিধি থাকিলেও, উহা "সোহহং" এই ভীষণতম অহঙ্কারপূর্ণ ভাবে কলুষিত।

৭। সত্যধর্ম সাধারণ আত্মাকর্ষণ (আমেরিকাদি মহাদেশে প্রচলিত স্পিরিচুয়ালিষ্ট) ধৰ্ম্ম অপেক্ষা বিভিন্ন। কারণ ঐ ধৰ্ম্মে অত্যুন্নত মহাত্মাদিগের উপদেশ নাই, কেবল কতকগুলি বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সাদৃশ্য-প্রদর্শন মাত্র আছে।

উপরে যাহা যাহা লিখিত হইল, তাহাতে ইহা বিশদরূপেই প্রদর্শিত হইয়াছে যে, "সত্যধৰ্ম্ম" অন্যান্য প্রচলিত ধৰ্ম্ম হইতে বিভিন্ন। ইহার সর্ব্বোৎকৃষ্টতার ও সত্যতার বিষয়ও আনুষঙ্গিক কিছু কিছু লিখিত হইয়াছে বটে, কিন্তু তদ্বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ প্রথম পরিচ্ছেদে লিখিত হইবে। এক্ষণে ধর্মার্থী সহজেই জিজ্ঞাসা করিতে পারেন যে, যদি তোমাদিগের এ ধৰ্ম্ম অন্য কোনও প্রচলিত ধৰ্ম্মতুল্য অকিঞ্চিৎকর নহে, তবে তোমরা ইহা -এই অমূল্য রত্ন কিরূপে কোথা হইতে পাইয়াছ? এই প্রশ্নের উত্তরদান এই মুখবন্ধের আর একটি উদ্দেশ্য।

এক্ষণে বক্তব্য এই যে, আমরা আত্মাকর্ষণরূপ উৎকৃষ্ট উপায় দ্বারা পারলৌকিক মহাত্মাদিগের নিকট হইতে এই ধৰ্ম্ম প্রাপ্ত হইয়াছি।(যে সকল পারলৌকিক আত্মারা অনন্তগুণধাম পরমপিতার সান্নিধ্যনিবন্ধন অতুল আত্মপ্রসাদ-সাগরে ভাসমান, তাঁহাদিগকে পারলৌকিক মহাত্মা কহে।) যেমন প্রদীপ হইতে যে আলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহা সামান্য ও সহজে নির্ব্বাণ হয়, কিন্তু সূর্য্যের আলোক বিশ্বব্যাপী ও অনির্ব্বাপণীয়, তদ্রূপ কালে জগতের সমস্ত ধর্মার্থীর হৃদয় হইতে অন্যান্য ধর্মপ্রদীপ (যাহাও এই সত্যধর্ম্মের অংশের কণিকা স্বরূপ) নির্ব্বাপিত হইয়া দূরীকৃত হইবে; এবং সত্যধৰ্ম্মরূপ মহাজ্যোতিঃ চির বিরাজিত থাকিবে।

                                              ওঁং
                                            ---------


                                             ওঁং
                                     সত্য-ধৰ্ম্ম।

                                প্রথম পরিচ্ছেদ।

সত্যধৰ্ম্ম কাহাকে কহে?

১। যে ধৰ্ম্ম সত্য অর্থাৎ নিত্যকাল-অনন্তকাল বিদ্যমান ছিল, আছে ও থাকিবে। যে ধর্ম সত্য অর্থাৎ যথার্থ বিষয় সমূহে পরিপূর্ণ। যে ধর্ম সত্য অর্থাৎ সত্যস্বরূপ পরম পিতার একমাত্র অভিপ্রেত এবং যে ধৰ্ম্ম সত্য অর্থাৎ অসৎকে সৎ করে তাহাকেই সত্যধৰ্ম্ম কহে।

পরমপিতা স্বীয় অংশ জড় জগতের সহিত সংযুক্ত করিয়াছেন, এই সংযুক্ত তদীয় অংশকে জীবাত্মা কহে। জীবাত্মার চতুর্দিকে যে সমস্ত বিষয় আছে, তৎসমুদায় পাপ ও পুণ্যে মিশ্রিত, জীবাত্মার কর্তব্য এই যে, স্বয়ং নিষ্পাপ হইয়া, ঐ সমস্ত বিষয়ের পাপাংশ যাহাতে স্পর্শ না করে, কেবল পুণ্য অংশ যাহাতে তিনি লাভ করিতে পারেন, এরূপ পথে নিয়ত গমন করেন। এই পথ জগতে আর নাই, সত্যধর্ম ভিন্ন এ পথ কেহ কখনও দেখায়ও নাই এবং দেখাইবার কাহারও শক্তিও নাই। এই পথ লাভের উপায় ঈশ্বরের উপাসনা ও গুণসাধন। (এই দুইটি বিষয় পশ্চাৎ ৩য় ও ৪র্থ পরিচ্ছেদে বর্ণিত হইবে।)

সত্যধর্মের সত্যতা ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠতা।

২। (ক) সাকার উপাসনা-পরমপিতা জড় জগতের সহিত তাঁহার অংশ সংযুক্ত করিয়াছেন, কিন্তু তিনি ঐ সৃষ্টি হইতে নির্লিপ্তভাবে বিভিন্ন আছেন, সুতরাং আকারবিশিষ্ট যাহাই ধর না কেন, তাহাই জড় জগতের সহিত সংযুক্ত হইবেই হইবে। এজন্য উহা কখনই সেই অনন্তশক্তি অনাদি অনন্ত নহে। অতএব আকার বিশিষ্ট বা সাকারের উপাসনা করিলে কখনই পরমপিতা পরমেশ্বরের উপাসনা করা হয় না। এ নিমিত্ত সহজেই সপ্রমাণ হইতেছে যে সাকার উপাসনা কর্তব্য নহে।

হিন্দুধর্মের শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব প্রভৃতি মতে সাকার উপাসনার বিধি আছে। কিন্তু ঐ সকল মতাবলম্বীরাও ইহা স্বীকার করেন যে, পরমাত্মা সাকার নহেন। পরন্ত "সাধকানাং হিতার্থায় ব্রহ্মণোরূপকল্পনা” অর্থাৎ সাধকদিগের হিতের নিমিত্ত ব্রহ্মের নিরাকার পরমাত্মার রূপ কল্পনা করা হয়। তাঁহারা বলেন, নিরাকারভাব সকলে ধারণা করিতে পারে না, এজন্য নিকৃষ্ট-চেতা উপাসকদিগের হিতের নিমিত্তই সেই নিরাকার পরম ব্রহ্মেরও রূপ কল্পিত হইল। কিন্তু যাহা কল্পনা, তাহা যে সত্য নহে, ইহা বলা বাহুল্য। আরও দেখ, তাঁহাদিগের এক প্রধান ভ্রম এই যে, তাঁহারা বলেন-"প্রথমে সাকার দেবদেবীর উপাসনা করিলে জ্ঞানযোগ হয়, সেই জ্ঞানযোগ ব্যতীত মনুষ্য কখনও নিরাকার ব্রহ্মকে ধারণা করিতে পারে না।"

(খ) কি হঠযোগ, কি রাজযোগ, কি অন্যবিধ যোগ, সকলেরই উদ্দেশ্য চিত্তের একাগ্রতা-সাধন। যখন পরমপিতার প্রতি প্রেম করিতে পারিলেই আত্মার একাগ্রতা জন্মে, তখন ঐ বিষয়ের যে কোনও প্রয়োজন নাই, তাহা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম হইতেছে। কেননা শতবর্ষ যোগসাধনা করিয়া যেরূপ একাগ্রতা হয়, এক মুহুর্তের প্রেমে তদপেক্ষা সহস্র গুণে একাগ্রতা জন্মে। আরও দেখ, শেষোক্ত উপায়ে কার্য্য করিলে একাগ্রতা ব্যতীত পাপমুক্তি প্রভৃতি লাভও হয়।

(গ) কতকগুলি লোক আসনসিদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপৃত থাকেন, কিন্তু উহারও আবশ্যকতা নাই, কারণ উহাও যোগেরই অন্তর্গত। দেখ, অমূল্যরত্ন হীরকমণি-মাণিক্যাদি লাভে যেমন সামান্য অর্থের অভাব থাকে না, তদ্রূপ সত্যধৰ্ম্ম লাভ হইলে আর ঐ সকলের কোনও প্রয়োজন থাকিবে না।

(ঘ) নিরাকারবাদপূর্ণ বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধৰ্ম্ম অপেক্ষাও সত্যধৰ্ম্ম শ্রেষ্ঠ ও সত্য, কেননা বেদান্তে ব্রহ্মকে নিরাকার স্বীকার করিলেও "তত্ত্ব-মসি" "সোহহং" প্রভৃতি ঘোরতর অহঙ্কারময় অন্যায্য বাক্য থাকাতে ও উপাসনার প্রকৃষ্ট পদ্ধতি না থাকাতে উহা অসত্য ও সত্যস্বরূপ লাভের অনুপযুক্ত। থিয়জফিষ্ট ও যোগসাধকেরাও "সোহহং" মতাবলম্বী। সুতরাং ঐ ভয়ানক মতের খণ্ডনার্থে কিঞ্চিৎ লিখিত হইল।

হে ক্ষুদ্র! হে ক্ষুদ্র হইতেও ক্ষুদ্র মানব। তুমি যখন অপর এক বা একাধিক মানবকে আত্মতুল্য জ্ঞান করিতে পার না, তখন সেই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডেশ্বরকে কিরূপে আত্মতুল্য বোধ করিবে? হে ক্ষুদ্রতম প্রস্তরকণা! তুমি কিরূপে ও কোন্ সাহসে অনন্ত হিমাচলকে আত্মসদৃশ বিবেচনা করিবে? হে ক্ষুদ্র মানব। যখন তুমি তোমা অপেক্ষা কিঞ্চিৎ উন্নত কোনও আত্মাকে কস্মিন্ কালে আত্মতুল্যবোধে সমর্থ নহ, তখন তোমা অপেক্ষা অনন্তগুণে উন্নত পরমপিতাকে কিরূপে আত্মতুল্য বলিয়া নির্দেশ করিতে সাহস কর?

মনুষ্য যতই উন্নত হউক, কখনও পরমপিতায় লীন হয় না। যেমন বৃত্ত ক্ষেত্র মধ্যে যত প্রকার নিয়মিত সরল রৈখিক ক্ষেত্র থাকিতে পারে, তন্মধ্যে নিয়মিত ত্রিভুজ ক্ষেত্র অল্প সংখ্যক বাহুবিশিষ্ট ও অল্পস্থানব্যাপী, তদ্রূপ পরমপিতার সৃষ্টিতে যত প্রকার পদার্থ আছে, তন্মধ্যে তোমাদিগের দৃশ্যমান এই স্কুল জগৎ পরলোক অপেক্ষা অল্পতর গুণবিশিষ্ট অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, বিস্তার ও বেধ এই ত্রিবিধ গুণযুক্ত। যেমন বৃত্তমধ্যস্থ সমচতুর্ভুজ, সম-পঞ্চভুজ, সমষড়ভুজ, সমশতভুজ প্রভৃতি ক্ষেত্র ক্রমশঃ উক্ত ত্রিভুজ অপেক্ষা অধিক বাহুবিশিষ্ট ও অধিক স্থানব্যাপী, সুতরাং বৃত্তের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী, তদ্রূপ পারলৌকিক উন্নত আত্মাদিগের দেহও * চারি, পাঁচ, ছয়, সাত, শত ইত্যাদি সংখ্যক্ গুণবিশিষ্ট, এবং তাঁহারা তোমাদিগের অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাপন্ন ও পরমপিতার অধিক নিকটবর্তী। কিন্তু যেমন বৃত্তমধ্যস্থিত নিয়মিত সরল রৈখিক ক্ষেত্রের বাহুসংখ্যা যতই বর্দ্ধিত হউক না কেন, উহা কখনই বৃত্তের সমান হইতে পারে না, তদ্রূপ জীবাত্মাও যতই উন্নতি লাভকরুক না কেন, কখনই পরমপিতার তুল্য হইতে পারে না।

এক্ষণে বিবেচনা করিয়া দেখ যে, যদি নির্ব্বাণ না হইল, অর্থাৎ যদি জীবাত্মা কখনও পরমাত্মার তুল্য হইতে না পারিল, প্রত্যুত অনন্তকাল অনন্ত ক্ষুদ্রভাবে তাঁহার নিকটে রহিল, তবে কখনও সে পরমাত্মাতে লীন হইতে পারিবে না।

(ঙ) থিয়জফিষ্ট ধৰ্ম্মে যদিও গুণের উন্নতির বিধি আছে, কিন্তু উহাও

"সোৎহং" এই অসীম অহঙ্কার পূর্ণ অন্যায্যভাবে-মলিনভাবে কলুষিত এবং উপাসনা প্রভৃতির প্রকৃষ্ট উপায় না থাকাতে হীনতর।

(চ) বৌদ্ধধর্ম প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ নিরীশ্বর-বাদপূর্ণ, ২য় ভাগ লামা প্রভৃতির অর্চ্চনার নিমিত্ত পৌত্তলিক ধর্ম-সদৃশ এবং ৩য় ভাগ পরলোক ও পারলৌকিক আত্মাদিগের অস্বীকারপূর্ব্বক কেবল নির্ব্বাণ লাভার্থে চীৎকারপূর্ণ। সুতরাং বৌদ্ধধর্ম সত্য নহে। কারণ উহার প্রথম ভাগের বিষয়ে অধিক তর্কের প্রয়োজন নাই, মনুষ্যমাত্রেরই যে সহজ জ্ঞান আছে, উহা তাহার বিরোধী, সুতরাং ভ্রান্ত। ২য় ভাগ যে অসত্য, তাহা পৌত্তলিক ধর্মের অসত্যতা বিষয়ে যাহা লিখিত হইয়াছে, তাহাতেই উপলব্ধ হইবে। এবং ৩য় ভাগের মূল মতই যে, অসত্য, তাহা ইতঃপূর্ব্বে বেদান্ত ধর্ম্মের অসত্যতা প্রতিপাদন সময়ে প্রদর্শিত হইয়াছে। অতএব বৌদ্ধধর্মের সমস্ত মতই যে অসত্য, তাহা প্রতিপন্ন হইল। "সমস্ত মতই যে অসত্য" একথা বলাতে কেহই যেন এরূপ ভাবেন না যে বৌদ্ধধৰ্ম্মে "অহিংসা পরমোধর্মঃ" ইত্যাদি নীতি-বিষয়ক যে সকল উপদেশ আছে, তাহাও অসত্য। বস্তুতঃ কোনও ধর্মের সমস্ত মত অসত্য নহে (বিশেষতঃ নীতিবিষয়ক)। তবে যে ভিত্তির উপরে ঐ মত গ্রথিত থাকে, অথবা যাহা ঐ ধর্ম্মের প্রধান বিষয়, তাহা সমস্ত বা ব্যস্তভাবে অসত্য হইলেই ঐ ধৰ্ম্মকে অসত্য বলা যায়। এস্থলে ইহা বলা আবশ্যক যে, বুদ্ধদেব যে অভিপ্রায়ে এই ধর্ম প্রচার করিয়াছিলেন, ভবিষ্যতের লোকেরা সেই অভিপ্রায় ভুলিয়া নূতন মত চালাইয়াছে।

(ছ) খ্রীষ্টীয়-ধৰ্ম্ম। -এই ধর্মে পরমপিতার সহিত পুত্র ও পবিত্র আত্মার অভেদভাব কল্পিত হইয়াছে। কিন্তু ইতঃপূর্ব্বে প্রদর্শিত হইয়াছে যে, তাহা কখনও হইতে পারে না। অপর, এই ধর্ম্মে সূক্ষ্ম-জ্ঞানের বিষয় কিছুই উল্লিখিত নাই, এই দুই কারণবশতঃ প্রচলিত খ্রীষ্টীয়-ধৰ্ম্ম ঐকদেশিক।

(জ) মহম্মদীয়-ধৰ্ম্ম।-এই ধর্মেও খ্রীষ্টীয় ধর্মের ন্যায় ঐকদেশিকতা দৃষ্ট হয়, অধিকন্তু বিধর্মীদিগের প্রাণনাশে ধৰ্ম্মলাভ প্রভৃতি কতকগুলি আসুরিক নিয়মও প্রচলিত আছে, সুতরাং ইহাকে সত্য বলা যায় না।

ঝ) ব্রাহ্ম-ধৰ্ম্ম। -এই ধর্মে পৌত্তলিকতা নাই, ইহাই ইহার একমাত্র গুণ। পরম্ভ ইহাতে প্রকৃত উপাসনার পদ্ধতি প্রচলিত নাই এবং এই ধর্মাবলম্বিগণ প্রকৃত উপাসনার অভাবে সূক্ষ্ম জগতের কোনও বিষয় জানিতে পারেন না, এবং জড়জগতের সূক্ষ্মবিষয় পরিজ্ঞানেও অসমর্থ। তজ্জন্যই ইঁহারা পুনর্জন্মাদি স্বীকার করেন না। আর, যে গুরু না হইলে আমরা কিছুই জানিতে পারি না, ইঁহারা ধর্মশিক্ষার্থে সেই গুরুস্বীকার করেন না। এজন্য ইহাও ঐকদেশিক ধৰ্ম্ম, প্রকৃত ধৰ্ম্ম নহে।

(ঞ) স্পিরিচুয়ালিষ্ট-ধর্ম। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে আমেরিকা প্রভৃতি স্থানে যে আত্মাকর্ষণের বিষয় প্রকাশিত আছে, তৎসংক্রান্ত সকল বিষয়ও সম্পূর্ণ সত্য নহে, কারণ তাঁহারা অত্যুন্নত মহাত্মাদিগের উপদেশ না পাওয়াতে প্রকৃত জ্ঞানের-প্রকৃত ধর্মের বিষয়ে সবিশেষ জানিতে পারেন নাই। এজন্যই তাঁহাদিগের গ্রন্থে কোন গূঢ় উপদেশ নাই। এজন্য উহাও সম্পূর্ণ সত্য নহে, ঐকদেশিক ধৰ্ম্ম।

উপরিভাগে প্রচলিত ধর্মসমূহের অসত্যতা ও ঐকদেশিকতা প্রদর্শনকালে ইহাও প্রদর্শিত হইয়াছে যে, সত্যধৰ্ম্ম উহাদিগের কোনওটীর ন্যায় ঐকদেশিক নহে এবং ঐ সকল ধর্মসম্বন্ধে যে সকল ভ্রান্তি আছে, তাহাও ইহাতে নাই, সুতরাং ইহা সত্য।

সত্যধৰ্ম্ম যে ঐকদেশিক নহে, প্রত্যুত সর্বাঙ্গবিশুদ্ধ ও অপর সমস্ত ধর্ম অপেক্ষা ব্যাপক, তাহার প্রমাণ এই-

১। অন্যান্য ধৰ্ম্ম পৃথিবীর মধ্যে যে সকল ভাব আছে, কেবল তাহাতেই বদ্ধ। কিন্তু সত্যধৰ্ম্ম অসীম ভাবে বিস্তৃত। ইহা পৃথিবীকে অতি তুচ্ছ বোধ করে এবং ইহা পরলোক ও পারলৌকিক আত্মা ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা প্রধান। দেখ, হিন্দুধৰ্ম্মাদিতে যে অষ্ট-সিদ্ধির উল্লেখ আছে, তাহা পৃথিবীমধ্যস্থ, কিন্তু সত্যধর্ম ব্যতীত অপর কোনও ধর্মে ইহলোকস্থ হইয়াও পরলোকে গমন ও তথাকার বিষয় পরিজ্ঞানরূপ মহত্ত্ব নাই।

২। অন্যান্য ধর্ম পৃথিবী পরিত্যাগ করিয়া অন্ধবৎ আর কিছু দেখিতে না পাইয়া একেবারে নির্ব্বাণ নির্ব্বাণ করিয়া চীৎকার করে, কিন্তু সত্যধৰ্ম্ম তদ্রূপ নহে। উহা পরম পিতার ক্রমময়-সৃষ্টির ন্যায় ক্রমে ক্রমে অসীম জ্ঞানমার্গপ্রদর্শক ও ক্রমশঃ উন্নতির দিকে অসীমরূপে প্রসারিত।

৩। অন্যান্য ধর্মে সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় পরিজ্ঞাত হওয়া যায় না। উহাদিগের মধ্যে কোন কোনটি পুরাতত্ত্বের, কোন কোনটি জ্যোতিষ শাস্ত্রের এবং কোন কোনটা বিজ্ঞান শাস্ত্রের বিরুদ্ধ ও অসংলগ্ন। কিন্তু সত্যধর্ম তদ্রূপ নহে। উহাতে সমস্ত শাস্ত্রের ও সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয়ের সুচারু মীমাংসা আছে।

৪। অন্যান্য ধর্মে যে সকল আশ্চর্য্য ঘটনার বিষয় আছে, এই ধর্মে তৎসমুদায়ই আছে, কিন্তু ইহাতে যে সকল অত্যাশ্চর্য্য ঘটনার বিষয় আছে, অন্য কোনও ধর্মে তাহা নাই। কপিলের শাপে সগরপুত্রগণের বিনাশ, ভগীরথের অ দ্রুত উৎপত্তি ও অস্থিপ্রাপ্তি এবং গঙ্গার আনয়নদ্বারা সগর-পুত্রদিগের উদ্ধার প্রভৃতি যে সকল কথা হিন্দুধর্মে আছে এবং ৫ খানি রুটিদ্বারা বহু লোকের ভোজন সম্পাদন এবং ভুক্তাবশিষ্ট রুটির সংখ্যা শতাধিক গণনা ইত্যাদি যে সকল কথা খ্রীষ্টিয়ধর্মে আছে, একমাত্র সত্যধৰ্ম্মে তৎসমুদায়ের মীমাংসা আছে।

(বাসিদ্ধি প্রকরণ দেখ)। কিন্তু অন্য কোনও ধৰ্ম্মে ঐরূপ সামঞ্জস্য নাই। ইত্যাদি।

৫। অন্যান্য ধৰ্ম্ম ক্রমশূন্য ও একদেশদর্শী, কিন্তু সত্যধৰ্ম্ম ক্রমপূর্ণ ও সর্ব্বদর্শী। খ্রীষ্টীয় ধৰ্ম্মাদিতে পাপমুক্তিই অন্তিম ফল, কিন্তু তাহাও যে কি উপায়ে হইতে পারে, তাহারও বিশেষ বিবরণ নাই। যোগসাধন ধৰ্ম্ম ও বৌদ্ধধর্মের মতে পাপ ও পুণ্যই নাই, অথচ ঐ দুইটী ধৰ্ম্ম নির্ব্বাণ এই ভীষণ চীৎকাররবে মিশ্রিত, সুতরাং উন্নতিলাভের জন্য উঁহারা কতিপয় শুষ্ক জ্ঞানের উপর মাত্র নির্ভর করে। আত্মাকর্ষণ, পাপগ্রহণ, বিবিধ সিদ্ধি লাভও আয়ুঃপ্রদানশক্তি এই সকল প্রধান বিষয়ের যথাযথ বিবরণ সত্যধৰ্ম্ম ভিন্ন অন্য কোনও ধৰ্ম্মে নাই। খৃষ্টান ধর্মে একমাত্র পাপগ্রহণের কিছু উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু তাহাও অন্যের কিরূপে হয়, তাহা নাই। হিন্দুধর্মে একমাত্র সিদ্ধির কথা আছে বটে, কিন্তু তাহাও পূর্ব্বানুরূপ স্কুল ভাবে বদ্ধ। অন্যান্য প্রচলিত ধর্মে এ বিষয়ের কিছুই নাই, বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সুতরাং এই সকল বিষয় হইতে জানা যাইতেছে যে সত্যধর্মই একমাত্র সত্য ও সর্ব্বোৎকৃষ্ট।

পূর্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে যে, পারলৌকিক মহাত্মাদিগের নিকট হইতে আমরা এই ধৰ্ম্ম প্রাপ্ত হইয়াছি। সুতরাং তাঁহারাই এই ধর্মের প্রচারক। যে ব্যক্তির (১) প্রেম, (২) সরলতা, (৩) পবিত্রতা, (৪) একাগ্রতা,

(৫) ভক্তি ও (৬) ঈশ্বরজ্ঞান আছে এবং (৭) যাহার মন কুপথে গমন করে

না, পারলৌকিক আত্মারা তাহাকে আশ্রয় করিতে ও স্ব স্ব মন্তব্য জানাইতে পারেন। কিন্তু কেবল উক্ত গুণগুলি থাকিলেই পারলৌকিক মহাত্মারা কোনও ব্যক্তির দেহ আশ্রয় করেন না। যে ব্যক্তির উল্লিখিত গুণসমূহ অত্যন্ত অধিক পরিমাণে হইয়াছে এবং নিম্নলিখিত গুণগুলিও আছে, পারলৌকিক মহাত্মারা তাঁহাকেই আশ্রয় করিয়া থাকেন।

গুণ যথা-

(৮)-সম্পত্তি বিষয়ে নিস্পৃহতা।

(৯)-নিষ্পাপ অবস্থা বা মূর্তিমতী পবিত্রতা।

(১০)-অন্যদীয় পাপগ্রহণ ক্ষমতা।

(১১)-লোকের উপকার ভিন্ন অপকার করিব না, এই বিষয়ে দৃঢ় নিশ্চয়তা।

(১২)-সিদ্ধিসমূহ লাভের উপযুক্ত গুণ।

(১৩)-কাম-ক্রোধহীনতা।

(১৪)-অন্ততঃ সমস্ত মনুষ্যকে সহোদরবৎ দর্শন ও তদনুরূপ আচরণ করা। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

এক্ষণে বিবেচনা করিয়া দেখ, তোমাদিগের জ্ঞাতব্য বিষয়ে পারলৌকিক মহাত্মারা যাহা জ্ঞাত আছেন, তাহা অবশ্যই অভ্রান্ত, কেননা তাঁহারা ঈশ্বরের এত সান্নিধ্যলাভ করিয়াছেন যে, এই বিষয়ে তাঁহাদিগের হৃদয়ে আর ভ্রান্তি যাইতে পারে না। সুতরাং সহজেই প্রতীয়মান হইবে যে, অন্ধ জগৎ আপনার আত্মার উৎকর্ষে যাহা জানিয়াছে, তাহা অপেক্ষা,-পারলৌকিক মহাত্মাদিগের দ্বারা যাহা জানা যাইতেছে, তাহা সত্য। সত্য!! সত্য!!! সুতরাং সত্যধৰ্ম্ম যে প্রকৃতপক্ষে সর্ব্বাঙ্গবিশুদ্ধ ও সত্য, তদ্বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নাই!!!

                                      ওঁং 
                                 ------


                               ওঁং 

             দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।

সত্যধর্মের সার কি?

১। সত্যধর্মের বিষয়ে মুখবন্ধে ও প্রথম পরিচ্ছেদে যাহা লিখিত হইয়াছে, তাহাতেই এ ধর্ম্মের মত প্রকাশিত হইয়াছে। এক্ষণে উহার সার অংশ লিখিত হইতেছে।

(ক)-মানব জন্মের স্বার্থকতা সম্পাদন।

(খ)-জীবাত্মার বিনাশ সাধন বা পরমাত্মার জীবত্ব বিনাশ সাধন।

(গ)-ভগ্নাংশের অখণ্ড আকারে পরিবর্তন সাধন।

(১)-যখন মনুষ্য প্রেমানন্দময় পরম পিতার প্রেম-সুধাপানে আনন্দসাগরে মগ্ন হয়, তখনই মানব জন্মের স্বার্থকতা সম্পাদিত হয়।

(২)-পাশমুক্ত হইলেই জীবত্ব বিনাশ সাধন হয়।

(৩)-উপরি উক্ত অবস্থাদ্বয়ের পরে, যখন দেহাবচ্ছিন্ন পরমাত্মার জীবত্ব ধ্বংস হইল, অথচ পূর্ণতা হইল না, তখন তিনি ক্রমশঃই পূর্ণস্বরূপ অনাদি অনন্তের নিকটবর্ত্তিতা লাভ করিতে প্রবৃত্ত হন, অর্থাৎ ক্রমশঃই পূর্ণত্ব পাইতে থাকেন। ইহাকেই ভগ্নাংশের অখণ্ড আকারে পরিবর্তন সাধন শব্দে নির্দেশ করা হইয়াছে।

এস্থলে ইহা অবশ্য বক্তব্য যে, ঐরূপে আত্মা উন্নতি লাভ করিয়া অনন্তকালেও স্বপ্রযত্নে পূর্ণ পূর্ণত্ব পাইতে পারে না। মনে কর উল্লিখিত গুণসম্পন্ন আত্মা যেন ৯ হইতে অনন্তকাল উন্নতি দ্বারা ক্রমশঃ ৯৯, '৯৯৯, *৯৯৯৯ ইত্যাদিরূপে ৯ হইল। কিন্তু উহাও যে ১ হইতে ক্ষুদ্রতর, তাহার প্রমাণ এই-

• ৯৯৯৯৯৯....ইত্যাদি অনন্ত সংখ্যক।

•০০০০০০ [ইত্যাদি (অনন্ত-১) সংখ্যক শূন্য। ১


কি উপায়ে এই ধর্ম্ম অবলম্বন করা যায়?

২। প্রথম পরিচ্ছেদের শেষভাগে যে সকল গুণের উল্লেখ করা হইয়াছে, ঐ সকল গুণবিশিষ্ট হইলে, পারলৌকিক মহাত্মাদিগের নিকট হইতে এই ধর্ম লাভ করা যায়। কিন্তু ঐ সকল গুণ সাধারণের লাভ করা দূরে থাকুক, ভূমণ্ডলে কোটি কোটি বৎসরের মধ্যে কদাচিৎ ২।১ জনে লাভকরিতে পারেন। এজন্য কেবল পূর্ব্ব উপায়ে এই ধর্ম সাধারণের সুপ্রাপ্য নহে। অথচ অনন্ত করুণাময় পরম পিতার ইচ্ছা এই যে, এই ধৰ্ম্ম সাধারণের সুপ্রাপ্য হয়। এ জন্যই উপযুক্ত গুণসম্পন্ন সাধকের প্রয়োজন। পূর্ব্বোক্ত প্রচারকেরা ভারপ্রাপ্ত সাধকের নিকটবর্তী হইয়া, জনসমাজে প্রচার করিতে উদ্যত হইয়াছেন। উল্লিখিত সাধকের নিকট হইতে যাঁহারা এই ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিবেন, তাঁহাদিগের নিম্নলিখিত গুণ গুলি থাকা আবশ্যক। ধর্মার্থীর গুণ যথা-

(১)-সহজ জ্ঞান।

(২)-নির্ভরতা অর্থাৎ পরম পিতা যাহা করিতেছেন, তাহা আমার মঙ্গলের জন্যই হইতেছে। তিনি অনন্ত কালেও কখনও অমঙ্গল বিধান করিবেন না।

(৩)-বিশ্বাস অর্থাৎ তিনিই আমার সমুদায়।

উল্লিখিত গুণবিশিষ্ট হইয়া, (পারলৌকিক মহাত্মারা যাঁহাকে এই ধর্ম্মের যাবতীয় মর্ম জ্ঞাপিত করিয়াছেন এবং গুণরাশি দর্শনে যাঁহাকে প্রকৃত উপযুক্ত পাত্র বিবেচনা করিয়া, প্রথমে পারলৌকিক মহাত্মারা, পশ্চাৎ স্বয়ং পরম পিতা এই ধৰ্ম্ম প্রচারার্থে অনুমতি করিয়াছেন,) সেই সাধকের নিকটে বা তদাদিষ্ট ব্যক্তির নিকটে দীক্ষিত হইলেই এই ধর্ম অবলম্বন করা যায়। দীক্ষিত হইবার নিয়ম পরবর্তী পরিচ্ছেদে বিস্তারিত রূপে লিপিবদ্ধ করা যাইবে।


কি কি উপায়ে সত্য-ধৰ্ম্ম-পথে থাকা যায়?

৩। যে তিনটী গুণবিশিষ্ট হইলে, সত্যধৰ্ম্ম অবলম্বন করা যায়, তাহা বিনষ্ট না হইলে এবং রীতিমত উপাসনা করিলে এই ধর্মে থাকা যায়। দেখ, উপাসনা জীবনের অত্যন্ত গুরুতর প্রয়োজনীয় বিষয়। উপাসনা ব্যতীত সত্যধৰ্ম্ম-পথে অবস্থিতির আর উপায় নাই। যে ব্যক্তি উপাসনা করে নাই, তাহার পাপ জীবন পশুভাব বিহীন হইয়া কখনও প্রকৃত মনুষ্যত্ব প্রাপ্ত হয় নাই। যে ব্যক্তি উপাসনা করে নাই, সে
পাপমুক্তির পরে সুবিমল আত্মপ্রসাদ কি মধুময়-কি অমৃতময় পদার্থ, তাহাও জানিতে পারে নাই, যে ব্যক্তি উপাসনা করে নাই, তাহার মন কখনও দৃঢ় হয় নাই, যে উপাসনা বিমুখ, সূক্ষ্ম জগতের কথা দূরে থাকুক, সে স্কুল জগতের সূক্ষ্মভাবও জানিতে পারে নাই এবং যে উপাসনা করে না, তাহার আত্মাও নিস্তেজভাবে থাকে। ইত্যাদি। অতএব উপাসনাই বল, উপাসনাই শান্তি। যে এমন ধনে বঞ্চিত, সে যে ধর্মচ্যুত হইবে, তাহাতে আর সন্দেহ কি ???

                                        ওঁং 
                               -----------



                                   ওঁং 




















































































No comments:

Post a Comment

সত্য ধর্ম্ম বই

Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *